ঢাকা খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ফিচার

দূষিত পরিবেশে বিপন্ন দেশ রক্ষার এখনই সময়

আমিনুল ইসলাম  ২৬ আগষ্ট ২০২৫ ০৬:২৫ পি.এম

পরিবেশ দূষণরোধে এখনই জরুরিভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ক্ষতিকর  গ্যাসসমূহের নির্গমন রোধ করার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে একসময় বসবাস অযোগ্য হয়ে পরবে আমাদের দেশ।পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে হলে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও পরিবেশ দূষণ-নিয়ন্ত্রণ বিভাগকে আরো শক্তিশালী করে প্রস্তাবিত পরিবেশ বিভাগের আওতায় পরিবেশগত ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে জোরদার করা এখন সময়ের দ্বাবি। প্রয়োজনে সরকার পরিবেশ সংষ্কার কমিশন গঠন করে দিতে হবে।

মানবজীবনের জন্য পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষের জীবনের বিকাশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে পরিবেশ । ভালো পরিবেশ সুস্থ মানুষ আর খারাপ পরিবেশ অসুস্থ মানুষ তৈরি করে। পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রথম ও প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে সুস্থ প্রশান্ত পরিবেশ।
বেঁচে থাকার জন্য যে সুস্থতার প্রয়োজন পরিবেশ ক্রমেই তা হারিয়ে ফেলছে। তাই সঙ্গত কারণেই বিশ্বব্যাপী মানুষ পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে; পাশাপাশি পরিবেশের সুস্থতা রক্ষার জন্য উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। 
যার ফলে সারাবিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বি-ক্যাটাগরীর বিভিন্ন দেশ নিয়ে চিন্তিত সেক্ষেত্রে গত ১৬ বছর ধরে জাতিসংঘ,বিশ্বব্যাংক,এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সহ বিভিন্ন সংস্থা ও দাতা দেশগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। যেখানে  অন্যান্য দেশগুলো এর সুফল কাজে লাগিয়ে তাদের দেশের পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে অনেকটাই সফল সেখানে আমাদের দেশে এর তেমন কোনো সুফল তো মেলেইনি বরং জনসচেতনতার অভাব,সুনির্দিষ্ট আইনের প্রয়োগ না থাকা,প্রতিনিয়ত বনভূমি ধ্বংস,কতৃপক্ষের দ্বয়সারা মনোভাব,দেশপ্রেমের অভাব,মূল্যবোধের অবক্ষয়,অপরিকল্পিত নগরায়ন,ধুলো দূষণ,
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বনজসম্পদ হ্রাস, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার,শিল্প বর্জ্য,মেডিকেল বর্জ্য সহ
নানাবিধ কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।দখলে,দূষণে বিপর্যস্ত পরিবেশ আজ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

আমরা যে স্থানে বসবাস করি সে স্থান এবং তার আশপাশের অবস্থাই হলো পরিবেশ। ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, গাছপালা, নদীনালা, মাটি, বায়ু, বিষয়-সম্পত্তি এ সবকিছু মিলেই তৈরি হয় পরিবেশ। মানুষের আচার-ব্যবহার ও জীবনধারণ পদ্ধতি পরিবেশ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। আবার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সমাজ দ্বারাও পরিবেশ প্রভাবিত হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। 

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর মতে, ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩৯ লক্ষ ৩৫ হাজার।
যা ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুনের বেশি। ক্রমবর্ধমান মানুষের চাপ একটি লোকালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশ কতখানি বিনষ্ট করতে পারে তার উজ্জ্বল উদাহরণ আমাদের রাজধানী ঢাকা।
 
ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, যাতায়াত, অবসর ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা এগুলো পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কিন্তু রাজধানীর শতকরা ৯০ জনের জন্য তা নেই। বস্তুত দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও অভাব অনটন আমাদের পরিবারকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, শুধু রাজধানীর জীবনই নয়, গোটা বাংলাদেশের পরিবারকেন্দ্রিক সমাজ জীবন এক বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

বাঁচার পথ খুঁজতে গিয়ে মানুষ প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর নির্মম হস্তক্ষেপ করছে।দেশের মানুষেরা জ্বালানির জন্য এবং বসতবাড়ি ও আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য বনজ সম্পদের বিনষ্টি সাধন করছে। ফলে প্রতিনিয়ত পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে।

আমাদের দেশের পরিবেশ দূষণকারী দ্রব্যগুলোর মধ্যে সীসা, পারদ, সালফার-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মন-অক্সাইড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে কতকগুলো আবার আমাদের মলমূত্র ও শরীরের পচন থেকে উৎপন্ন। এগুলো প্রতিনিয়ত বায়ু দূষিত করছে। এ বায়ুদূষণ চলছে সারা বিশ্ব জুড়ে। কার্বন থেকে শুরু করে ভারী ধাতু, জটিল জৈব যৌগ, জীবাশ্ম জ্বালানি, নিউক্লিয় আবর্জনা, ক্লোরোফ্লুরোমিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, আলোক রাসায়নিক ধোঁয়া ইত্যাদি বায়ুদূষণের তথা পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ। এর ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মতে, এ শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.৫ থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।
পৃথিবীর উপকূলভাগ প্লাবিত হবে। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ার মতো নিম্নাঞ্চল ডুবে যাবে।বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। 

সবশেষে এক্ষেত্রে একমত হওয়া জরুরি  প্রতিকার পেতে ও শঙ্কামুক্ত জীবন গড়তে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সচেতনতার সাথে  স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে দ্রুতই  আমরা এর সুফল পেতে পারি।

লেখক-সাংবাদিক,কলাম লেখক
প্রতিষ্ঠাতা-নিরাপদ জীবন গড়ি.

আরও খবর

news image

দূষিত পরিবেশে বিপন্ন দেশ রক্ষার এখনই সময়

news image

আম ব্যবসায় সাফল্য: বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন সোহাগের 

news image

তামাকমুক্ত দেশ গড়তে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন

news image

সৌখিন কৃষি ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানবিক সেবা কাজে কুসুমপুর গ্রামবাসীর ভালোবাসায় শিক্ত ভেষজ বিজ্ঞানী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ টিপু সুলতান পিএইচডি 

news image

প্রযুক্তিগত সুফল কৃষিতে জাগরণ সৃষ্টি করেছে

news image

পথে প্রান্তরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জারুল ফুল

news image

হাওরে কান্দা কাটায় গোখাদ্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস

news image

দক্ষিনাঞ্চল থেকে হাড়িয়ে যাচ্ছে ফুটপাতে চুলকাটার ঐতিহ্য

news image

জোসেফ মাহতাবের এক বহুমুখী সমাজ সংস্কারকের অন্যতম গল্প

news image

শেরপুরের মাটি সূর্যমুখী চাষে বেশ উপযোগী

news image

আমতলীতে আমের মুকুলের মৌমৌ গন্ধে দল বেঁধে মধু আহরনে ছুটছে মৌমাছি

news image

আমতলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেত ও বেতফল

news image

ভবেন্দ্র মোহন সাহা থেকে ভবা পাগলা হয়ে উঠার গল্প

news image

দক্ষিনাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গানের পাখি দোয়েল