ঢাকা খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ফিচার

আমতলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেত ও বেতফল

নিজস্ব প্রতিবেদক ২৯ ডিসেম্বার ২০২৪ ০১:৪০ পি.এম

সারাদেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে ফুল ও ফলের।তার ধারাবাহিকতায় বরগুনার আমতলী উপজেলার সমস্ত জায়গা থেকেই বেতও বেতফল হারিয়ে যাচ্ছে শান্তসুরে।  

বেতগাছে ফুল আসে আশ্বিন-কার্তিক মাসে। আর ফল পাকে চৈত্র, বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। এটি যেমন পুষ্টিকর তেমন সুস্বাদু ও ওষুধিগুণ সমৃদ্ধ। মূলত মাটির অবস্থা ভেদে এ ফল খুব মিষ্টি হয়। আবার স্থান ভেদে একটু টকও হয়। বেতফল মরিচ দিয়ে চাটনি করে খেতে খুব মজাদার। পাকা বেতফল এমনিতেই খেতে দারুণ সুস্বাদু। 

বেত গাছ আমাদের অতি প্রয়োজনীয় ও কুটির শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল। মাটি কাটার ওড়া, বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি তৈরি, নারীদের তৈরি শীতল পাটি, নামাজের পাটি, ভাত খাওয়ার পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠি, চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরিসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর। বেত একটি মূল্যবান, টেকসই এবং স্মার্ট শ্রেণীর দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত।

বেত কি কি প্রয়োজনে ব্যবহার্য্যঃ

গ্রামের কৃষকের অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেতগাছ। বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প যেমন চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারি, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিল ল্যাম্প, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এটি গৃহনির্মাণ কাজেও ব্যবহার হয়। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ বা অফিসের শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার আছে। এ ছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কালের আবর্তে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে।

স্থানীয় বাজারগুলোঃ

বরগুনার আমতলী উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন তা হচ্ছে গুলিশাখালী,হলদিয়া,আঠারোগাছিয়া,

আরপাংগাশিয়া,আমতলী সদর ইউনিয়ন,চাওড়া ও কুকুয়ার ইউনিয়নগুলোতে একই অবস্থা রয়েছে।ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যে থেকেও হারিয়ে যেতে শুরু করেছে বেতফল ও বেত। 

২০০০ সালে  একটি ২০-২২ হাত লম্বা বেত আগে বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। কিন্তু আজ সে বেত  ২০০ টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে না।

বেত ক্রয় ও বিক্রয় বিপণন-সম্পর্কিতঃ

আমতলী  উপজেলার গুলিশাখালী  গ্রামের বেত বিক্রেতা ঝালোবাড়ির মাধব ও পরান ঝালো বলেন, গত কয়েক বছর আগেও আমি আমাদের বাড়ির আঙ্গিনাসহ গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বেত গাছের বাগান দেখেছি। কিন্তু এসবের চাহিদা কমে যাওয়ায় আজ এ বাগানগুলো আর দেখা যায় না। শহরায়ন ও নগরায়নের কারণে আজ মানুষ এসব বাগান উজাড় করে ফেলেছে।

কিন্তু বর্তমানে এগুলো আর চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্মের কোমলমতি শিশুরা এ গাছ ও ফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বেতের তৈরি  সরঞ্জামাদি ক্রেতা জয়নুল আবেদিন জানান, গত ৪০ বছর আগেও ওড়া বা জোঙ্গরা,ঝুড়ি,ফুল গাছের টব,ছোফা,লাঠিসহ নানাবিদ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের তৈরির এক অন্যতম  জাদুকাঠি। মজবুত করে গিঁট দেওয়ার জন্য

রশি বা দড়ির ও প্রয়োজনীয়তা মেটাতে  বেত ব্যবহার করা হতো। আজ বেত অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের দড়ি বা রশি।  এতে যেমন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ, তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য।

আমতলী উপজেলা সিনিয়র  কৃষি কর্মকর্তা মো:ইছা বলেন,বেত এক সময় গ্রামীণ জনজীবনের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরির অন্যতম অনুষঙ্গ ছিলো। শহুরে জীবনেও বেতের তৈরি জিনিসপত্র আভিজাত্যের প্রতীক। কিন্তু বর্তমানে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোঁপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে। ফলে দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেতও বেতফল হারিয়ে যাচ্ছে।হারিয়ে যাচ্ছে বেতের তৈরি জিনিসপত্র আভিজাত্যের প্রতীক।