বিশেষ প্রতিনিধি ১০ মার্চ ২০২৫ ০৫:৪৫ পি.এম
আমতলী উপজেলা নোমরহাট বাজারের রাস্তার দুপাশে অস্থায়ী সেলুন বসে চুলকাটার এক মহোৎসব চলছিলো।আজ কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।
আমতলী উপজেলায় গুলিশাখালি,কুকুয়া,হলদিয়া,
আঠারোগাছিয়া,চাওড়া,আমতলী, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে ক্রমাগতভাবে সাপ্তাহিক ছোট,বড় মিলে বাজার বসতো।এতে মুদি মনোহারি,কাচা বাজার,মাছ বাজার,কামার,কুমাড়,তাঁতি ও সেলুনগুলো ফুটপাতে বসে চুলকাটার যেন এক মহোৎসব ছিলো।ফুটপাতে চুলকাটা বেশ জমে উঠতো।একের পর এক সিরিয়াল ধরে দাড়িয়ে থাকতো।আজ সময় ও কালের বিবর্তনে ঐতিহাসিক চুলকাটার দৃশ্য হারিয়ে যাচ্ছে।
বৃদ্ধরা জানান,আমতলীতে সাপ্তাহিক বাজার ছিলো বুধবার ওই দিন ইটের উপর বসে চুল কেটে দিতেন অমল বাবুসহ অনেক চুলকাটারু(নাপিত)ছিলো।তবে নাপিত কথা শুধু চুলকাটারুদেরই বলা হতো না এটা তাদের একটা বংশ বলে ক্ষ্যাত।
যিনি চুল কেটে দিচ্ছেন দুই পায়ের উপর হাটু ভর করে বসে থাকতেন আর চুলকাটারু চুল কেটে দিতেন।
তবে তারা এ ঐতিহ্যের কথা ভুলে গেলেও ভুলবেনা হাটুর উপর ভর করে চুল কাটানো লোকগুলো।
মানুষ স্বভাবগতই সুন্দরের পূজারী। চুল -দাঁড়ি মানুষের সৌন্দর্য বহন করে,এই চুল -দাঁড়ি নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। এই কারণেই নরসুন্দরদের কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। চুল-দাঁড়ি কেটে মানুষকে সুশ্রী করা যাদের কাজ,তারাই হলেন নরসুন্দর।
সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে রাস্তার পাশের নবসুন্দররা এখন অতীত হয়ে পরছে। তাদের স্থান দখল করেছে আধুনিক সেলুন ও পার্লার। আধুনিকতায় টিকতে না পারলেও বৃদ্ধবয়সীরা জীবিকার তাগিদে এখনো ধরে আছেন পুরনো পেশা তাদের এখনো দেখা মেলে হাট-বাজারে, খেয়াঘাটে, ফুটপাতের কিংবা গ্রামগঞ্জের জলচৌকিতে বা ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে চুল-দাঁড়ি কাটতে।কিন্তু চুল কাটতে দেখা গেলেও একেবারে স্বল্প পরিসরে কাটছেন দুএকজন নাপিরা।তবে চুলকাটারুরা তখনকার নাপিত বলে বেশ পরিচিতি ছিলো।
গুলিশাখালীর কালিবাড়ির নাপিত ছিলো মাখন শীল তার পরিবারের অধিকাংশ পুরুষেরা এ পেশায় কর্মরত ছিলেন,মাখম শীল গুলিশাখালী ইউনিয়নের,কলাগাছিয়া,গোজখালী,খেকুয়ানী,কালিবাড়ি এলাকায় সাপ্তাহিক বাজারগুলোতে রাস্তায় বসে চুল কাটতেন।মাঝে মাঝে জায়গায় বসা নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে যেতো।
আমতলী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে এখনো চুল দাঁড়ি কাটেন নকুল শীল । নকুল শীল হতাশার সুরে তিনি জানান, বাপ দাদার পেশা ধরে রেখেছি কিন্তু ক্রেতা পাওয়া যায় না। এখন আর এমন কেউ নেই, যারা হাটে-বাজারে খোলা আকাশের নিচে বসে চুল-দাঁড়ি কাটেন। সংসার চলা তো দূরের কথা চিরুনি, সাবান, ফিটকিরি, পাউডার ও লোশন কেনার টাকায় হচ্ছে না।
তিনি জানান, অনেক বছর আগে চুল কাটা বাবদ দিতে হতো চার পয়সা আর দাঁড়ি কাটার জন্য দু-পয়সা সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলতো, কিন্তু বর্তমানে ৩০ টাকায় চুল ও ২০ টাকায় দাঁড়ি খেউরি করে হারাদিনে যে টাহা পাই হেতে সংসারে ঘাটতি পুরন অয়না। কিন্তু আগে খেউরি করতাম বলাকা ব্লেড দিয়ে ছিলো ১ টাকা। এহন ব্লেড কিনি ৫ টাহায়।মোটামুটি চইল্লা ফির্রা বাচতে পারি।
এ ব্যাপারে তিনি অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, পূর্বে আমরা বার্ষিক চুক্তিতে কাজ করতাম,কিন্তু বর্তমানে সেই নিয়ম নেই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন,বর্তমানে যে পরিবর্তন এসেছে,চুল-দাঁড়ি কাটার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিও পরিবর্তন হয়েছে। সে সব সেলুনে এখন আর শান দেওয়া ক্ষুর দেখাই যায় না,তার বদলে এসেছে ব্লেড লাগানো ক্ষুর। এসেছে শেভিং ক্রিম, লোশন , চুলের কলপ। তিনি যখন এ কাজ শুরু করেছিলেন তখন এগুলো ছিল কল্পনাতীত।
গুলিশাখালীর বাসিন্দা শাহ্ নুর রহিম রিসাদ মন্টি বলেন, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে হাটে যেতাম। চুল কাটাতে বাজারে যেতাম। এখন রাস্তার পাশে চুল-দাঁড়ি কেউ কাটায় না, ছেলে-মেয়েদের চুল ও কাটায় আধুনিক সেলুন গুলোতে। আমরা এখনো এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও এমন একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিশ্চয়ই গল্পই মনে হবে।
প্রযুক্তিগত সুফল কৃষিতে জাগরণ সৃষ্টি করেছে
পথে প্রান্তরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জারুল ফুল
হাওরে কান্দা কাটায় গোখাদ্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস
দক্ষিনাঞ্চল থেকে হাড়িয়ে যাচ্ছে ফুটপাতে চুলকাটার ঐতিহ্য
জোসেফ মাহতাবের এক বহুমুখী সমাজ সংস্কারকের অন্যতম গল্প
শেরপুরের মাটি সূর্যমুখী চাষে বেশ উপযোগী
আমতলীতে আমের মুকুলের মৌমৌ গন্ধে দল বেঁধে মধু আহরনে ছুটছে মৌমাছি
আমতলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেত ও বেতফল
ভবেন্দ্র মোহন সাহা থেকে ভবা পাগলা হয়ে উঠার গল্প
দক্ষিনাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গানের পাখি দোয়েল