ঢাকা খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ফিচার

জোসেফ মাহতাবের এক বহুমুখী সমাজ সংস্কারকের অন্যতম গল্প

বিশেষ প্রতিনিধি ২৬ ফেব্রু ২০২৫ ০৭:১০ পি.এম

বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী এক নাম জোসেফ মাহতাব। তিনি একজন সমাজকর্মীই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা মানবতার কল্যাণে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

 বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধ, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানামুখী সামাজিক কার্যক্রমে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জোসেফ মাহতাবের মতো ব্যক্তিরা সমাজের প্রকৃত পথপ্রদর্শক। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক উন্নয়নে তার অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধ,  এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মতো ইস্যুগুলো শুধু একটি দেশের উন্নয়নের জন্যই নয়, বরং মানবতার সার্বিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির মতো আধুনিক বিষয়েও তার কাজ প্রমাণ করে যে তিনি সময়োপযোগী সমস্যা সমাধানে সক্রিয়।

আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ ও পুরস্কারপ্রাপ্তি

জোসেফ মাহতাব আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও অর্জন করেছেন। তাঁর কাজ কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি প্রশংসিত। তাঁর অনন্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন এবং বিশ্বব্যাপী চেঞ্জমেকারদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫০০ আবেদনকারীর মধ্যে থেকে নির্বাচিত ২২ জন চেঞ্জমেকারের মধ্যে তিনি একজন হিসেবে ইয়ুথলিড অ্যাম্বাসেডর মনোনীত হন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত দক্ষতা

জোসেফ মাহতাব স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন

এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি জন্য বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্বিবদ্যালয়ের অধ্যায়ন করছেন। তার এই শিক্ষাগত ও পেশাগত অভিজ্ঞতা তাকে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করার জন্য যথেষ্ট দক্ষ করে তুলেছে। ভিএসও, ইউএসএইড, ইয়ুথলিড এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছেন জোসেফ মাহতাব৷ এছাড়াও দেশি ও বিদেশি সংস্থা কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। 

নারী ও শিশুদের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় নিবেদিত জোসেফ মাহতাব।

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি গুরুতর সমস্যা। জোসেফ মাহতাব এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। তিনি কিশোরী ও তাদের অভিভাবকদের সচেতন করে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন। বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন বন্ধে দেশব্যাপী তিনি বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। স্বীকৃতি স্বরূপ গ্রেট ব্রিটেন থেকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেন জোসেফ মাহতাব। 

প্রযুক্তির প্রসারে ডিজিটাল দুনিয়ায় অপরাধের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোসেফ মাহতাব অনলাইন যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কথা বলছেন এবং তরুণদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করছেন। তিনি নারী ও শিশুদের সাইবার নিরাপত্তা এবং সাইবার যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কাজ করছেন। তিনি সাইবার হয়রানির শিকার নারীদের মানসিক শক্তি জোগানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়াও, তিনি সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে কীভাবে আইনি সহায়তা পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করেন। 

পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, ম্যানগ্রোভ বনায়ন এবং উপকূলীয় অঞ্চলের সুরক্ষায় সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা।

একজন নিবেদিতপ্রাণ জোসেফ মাহতাব দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে, তিনি ম্যানগ্রোভ বনায়ন ও উপকূলীয় বনায়ন নিয়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর সুরক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ম্যানগ্রোভ গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে তিনি স্থানীয় স্কুল, কলেজ, কৃষক ও জেলেদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তিনি স্থানীয় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠতে এবং বনায়ন সৃজনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে উদ্ভুদ্ধ করছেন। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে যে ঝুঁকি বাড়ছে, তা নিয়ে গবেষণা, লেখালেখি ও প্রচারণা চালিয়ে তিনি নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত প্রকল্পগুলো উপকূলীয় জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে, যা ভূমিক্ষয় রোধ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা

ম্যানগ্রোভ বনায়ন ও উপকূলীয় অঞ্চল সংরক্ষণ ও উপকূলীয় জেলাগুলোর নদী, খাল ও ইকোপার্কে ম্যানগ্রোভ বনায়নের উদ্যোগের বিষয়ের সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব পর্যায়ে বেশ কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা দিয়েছেন এবং প্রধান উপদেষ্টার কাছে আহবান জানিয়েছেন। জোসেফ মাহতাবের অক্লান্ত প্রচেষ্টা শুধু পরিবেশ রক্ষাতেই নয়, বরং স্থানীয় মানুষের জীবিকা ও টেকসই উন্নয়নের পথ তৈরি করতেও সহায়তা করবে। তাঁর এই উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে উদ্যোগ

যুবসমাজের উন্নয়ন ছাড়া দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়, এই বিশ্বাস থেকেই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তিনি ও তাদের সংগঠন যুবদের জন্য জীবন- জীবিকায়নে নানান রকমের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। উদ্যোক্তা তৈরিতে তাঁর উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে, যা তরুণদের আর্থিক স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছে। ইতিমধ্যে তাদের সংগঠনের সদস্য ও কয়েক শত তরুণ-তরুণীরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন ও ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এছাড়া, তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে স্বতন্ত্র যুব ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা তরুণ উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও স্টার্টআপ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রান্তিক চাষীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠ প্রস্তুত, বীজ রোপন, মাঠ পরিচর্যা ইত্যাদি কাজের জন্য কৃষক/কৃষাণীদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছেন। 

সরকারের নীতি নির্ধারণী ফোরামের প্রতি জোসেফ মাহতাবের চিঠি। 

জোসেফ মাহতাব সংবিধান ও স্বেচ্ছাসেবা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, "দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতার উন্নয়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে বাংলাদেশ সংবিধান বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। সংবিধান সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তাদের নাগরিক অধিকার, দায়িত্ব ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করবে। সংবিধান একটি দেশের মৌলিক আইন, যা নাগরিকদের অধিকার, দায়িত্ব ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংবিধান বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করবে। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রে সংবিধান অবশ্যপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত।" 

শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ, নেতৃত্ব এবং সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে স্বেচ্ছাসেবা (Volunteerism) বিষয়টি পাঠ্যক্রমে সংযোজন করা প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সরকারে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া,  তিনি নাগরিকদের নানাবিধ নাগরিক সমস্যা নিয়ে নিয়মিত জনপ্রতিনিধি, মাঠ প্রশাসন ও সরকারকে  চিঠি লিখে থাকেন আবার কখনও খোলা চিঠি পোস্ট করে থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমতলী উপজেলার একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে উপজেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরার প্রয়াসে People’s Voice of Amtali - PVA প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জোসেফ মাহতাব। PVA প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিলো স্থানীয় সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং জনপ্রতিনিধি, সরকার ও নীতি নর্ধারকদের সাথে জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি ও সেবার গুণগতমান বৃদ্ধি করা। PVA এর কার্যক্রম অনুসরণ করে কেনিয়া ও ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ কার্যক্রম চালু রেখেছে। এছাড়া, জোসেফ মাহতাব Nation Youth Engagement Network- NYEN এর বাংলাদেশ  চ্যাপ্টারের এর নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

জোসেফ মাহতাব ও তাঁর কাজ কেবল কিছু নির্দিষ্ট ইস্যুর ও ভৌগোলিক অবস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি একাধারে সামাজিক সমস্যা সমাধান, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, যুব উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও নীতি নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন বিশ্বব্যাপী। তার নেতৃত্ব ও উদ্যমের ফলে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে বলে আশা করা যায়। একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে জোসেফ মাহতাব কেবল স্বপ্ন দেখেন না, বরং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করেন। দেশের তরুণ সমাজ ও পরবর্তী প্রজন্ম তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে এবং তার দেখানো পথে এগিয়ে যেতে পারে।